🙏🌹🙏🌹🙏🌹🙏🌹🙏🌹🙏
কবি শাশ্বতী চ্যাটার্জীর তিনটি কবিতা
( ১ )
উপত্যকার কান্না
মে মাস এলে
অমলতাসের ফুলে হলুদাভ রঙ সরে মরচে পড়ে যায়,
পুরোনো সিঁড়ির ঘরে জ্বলে ওঠা উনিশটা পিদিমের
বুক জ্বলে পোড়া পোড়া বাসে,
পিদিমের বুক জ্বলা অলক্ষণ, দিদা বলেছিল।
দুঃস্বপ্নে দেখি, আর জন্মের অদেখা স্টেশনে
শোয়ানো রয়েছে সারি বাঁধা কচি মুখ
রক্তে ভেজা বিনুনীর ছোপ,
সাত ভাই চম্পার অশ্রু আল্পনা-
দোনলা বন্দুকের কষ বেয়ে জিঘাংসার স্রোত
আর রুদ্ধ কণ্ঠে ভাষার জেহাদ...
জ্যৈষ্ঠের ছন্নছাড়া বাতাসে
দুলে ওঠে কার যেন ভাটিয়ালি কান্নার স্বর-
জানলার ফটোফ্রেমে একফালি বিষণ্ণ শিলচর ভেসে আসে।
© শাশ্বতী
***
( ২ )
অভিশাপ
সভ্যতার হাঁড়িকাঠে রক্তের ছিটে এখনো তাজা
মাটি ভাগের ভুলভুলাইয়ায় পথ হারানো বর্ণমালা
তুমি তো এখনো আস্ত শৈশব! ফুটন্ত যৌবন।
দিগবিদিগ জ্ঞানহারা স্রোতে ছুটে চলে তোমার শব্দনদীর স্রোত-
সেখানে বাঁধ দিতে চায় কে বা কারা, বার বার!
মায়ের মুখের মাপে শেকল বানায় স্বেচ্ছাচারীর দল,
যুগের কণ্ঠে পরাতে চায় পোষ্যের বগলস!
এত পাপ সইতে পারেনি বসুন্ধরা।
অক্ষরের ভেলায় অন্ধকার ঢেউ ভেঙে ভেঙে
রাতের স্টেশনে ফিরে আসে ঝাঁঝরা করে দেওয়া বুলেটের দাপট
আর কিছু অপাপবিদ্ধ ভাষাসৈনিকের লাশ।
© শাশ্বতী
****
( ৩ )
উত্তরাধিকার
মুখের ভাষা কাড়ছে কারা
জন্ম অধিকার
মায়ের মানে হানছে আঘাত
বর্গি হানাদার
বাংলা আমার বাংলা তোমার
পথের পাঁচালী
মন সারিগান ভোরের আজান
সুখের দেওয়ালী
বাংলা আমার ঘুমপাড়ানি
চাঁদনী আলোর ধুম
এই ভাষাতে আকাশপরীর
গল্পে নামে ঘুম।
ঐ কারা ঐ সেলাই ফেলে
তোমার আমার ঠোঁটে
জবরদস্তি করতে জবাই
কষাই যত জোটে।
ভাষাকে দাও নির্বাসনে
স্পর্ধা এতই জোর?
বাংলা আমার নাওয়ের হাল
অধিকারের ভোর।
বরাক কাছাড় কোশিয়ারী
ইতিহাসের সাক্ষী
রক্ত নদীর কলঙ্কে কার
বোল লুকিয়ে রাখছি?
তপ্ত লোহার লাগাম পরাও
প্রতিবাদের কণ্ঠে
লজ্জা লজ্জা লজ্জা
তোমার শাসন নামের যন্ত্রে
প্রাণ দিয়েছে কমলা
তার বছর ষোলোর স্পর্ধা
বাংলা ভাষার কলজে বুকের
বাঁ দিক ঘেঁষা মজ্জা।
© শাশ্বতী
***************************
মালা চক্রবর্তীর দুটি কবিতা
( ১ )
মেঘ, রোদ্দুর অথবা জ্যোৎস্না
যদিও আমার মা কে আমি কখনো কথা বলতে শুনিনি
দেখেছি
আমি যতবার পড়ে গেছি
ব্যথা পেয়েছি
মা এর চোখে তখন মেঘের ভাষা
রিমঝিম্, রিমঝিম্, রিমঝিম্---
যতবার স্কুলের মাঠে রেসে জিতে গেছি
মা কেমন রোদ্দুর হয়ে যেত
আলোয় ভেসে যেত স্কুলমাঠের প্রতিটি ঘাস, ঘাসফড়িং এর ডানা।
যদিও মাকে আমি কোনো দিন কথা বলতে শুনিনি
কিন্তু, মনে পড়ে
মা কালো স্লেটে সাদা চক দিয়ে গোটা গোটা অক্ষরে আমার হাত ধরে লিখিয়ে দিচ্ছে , 'মা'।
জ্যোৎস্নায় ভেসে যাচ্ছি আমি----
সেদিন প্রথম জেনেছিলাম
আমার মাতৃভাষা, বাংলা
যার অন্য নাম মেঘ, রোদ্দুর অথবা জ্যোৎস্না ।
© মালা
***
( ২ )
আমার ভাষার নাম বাংলা*
আমার ভাষার নাম, বাংলা
আমার ভালোবাসার নাম, মা
আমার চেতনার নাম, মাতৃভাষা ।
আমার অস্তিত্বে, বাংলা ভাষা
আমার মননে, বাংলা ভাষা
বুকের উপত্যকায় যে অনুভূতি,
তিরতির করে বয়ে যায় ধানসিঁড়ি নদীর মতো
যে ভাষা ভাসায়, কাঁদায়, ভালোবাসায়—
সে আমার, বাংলা ভাষা।
যে ভাষার অনন্ত মূর্ছনায় গীতবিতান
যে ভাষায়, ফিরে আসেন মধুকবি
যে ভাষায়, জেগে থাকে বিষের বাঁশি
যে ভাষায়, একতারায় বাউল ফকির
যে ভাষায় কীর্তন, ভাটিয়ালি গান।
যে ভাষা ঠিক আমার মায়ের মতো
মরণ যে তুচ্ছ, সে ভাষার কাছে
বারংবার শুধতে চাই প্রকাশের ঋণ
একুশ যে আমাদের পথ দেখাল
বরকত, সালাম, রফিকদের আত্মদানে।
আর উনিশের সেই গর্বিত ভোরে,
শিলচর স্টেশনের প্রতি ইট জানে
কমলারা হারেনি, ভাষা-দস্যুর কাছে
লোহার বুলেট শুধু প্রাণ কেড়েছিল
ভাষাটা লুকোনো ছিল পাঁজরের হাড়ে।
© মালা
**********"****************
কমলা ---- কবিতার কোলাজ কলমে নীহার রঞ্জন দাস
শাশ্বতী চ্যাটার্জী , চন্দ্রানী চৌধুরী, এবং মালা চক্রবর্তী .....
কোলাজ নীহার রঞ্জন দাস
ভাষ্য পাঠ
চন্দ্রানী চৌধুরী
নীহার রঞ্জন দাস
নীহার //
দাসত্বের শৃঙ্খল পারিনি নিতে ,
হৃদয় উৎসারিত ভালবাসা আর
আত্মবলিদানে । মুক্ত হোক আজ আমার মাতৃভাষা,
বারবার গর্জে উঠা বন্দুকের ভাষায় বুক পেতেছিল কমলা, হিতেশ, বীরেন্দ্র, বরকত,রফিক, ইয়াশসুফের মত বহু প্রান, কোল খালি হয়েছিল বহু মায়ের,
বোনেরা হারিয়েছিল ভাতৃস্নেহ, রাখি বন্ধনের হাত। ভাষার মরু প্রান্তরে বসেছিল রক্তস্নান রত
শ্বেত বসনাদের মেলা,
কি নির্মম-নির্দয় ! ভাষা মা আমার
আমার কমলা,
আজও তোর রক্তে কৃষ্ণচূড়া লাল।
চন্দ্রানী //
আমাদের ভাষা ভাষান্তর হচ্ছে
নীহার //
আমাদের ভাষা নিয়ে রাজপরিবার ফন্দি করছে
চন্দ্রানী//
এ কেমন বিশ্বায়ণ , যেখানে স্কুলে কলেজে অফিসে আদালতে আমার মাতৃভাষা ভুলে যেতে হবে ?
নীহার//
রক্তে রাঙা কৃষ্ণচূড়া মানেই আমার মায়ের উঠোন
চন্দ্রানী//
রক্তে রাঙা কৃষ্ণচূড়া মানেই আমার কমলার রক্ত ভেজা মুখ
নীহার//
আমাদের ভাষা মানেই আমাদের রবীন্দ্রনাথ
আমাদের ভাষা মানেই আমাদের নজরুল
চন্দ্রানী //
আমি প্রশ্ন করছি তোমায় ,
তোমার ছেলে কি রবীন্দ্রনাথ জানে ?
তোমরা কি জানো ঊনিশে মে মানে আমাদের মাতৃভাষার দিন ?
নীহার //
শাসক যে এখন মরিয়া হয়ে উঠেছে আমাদের রবীন্দ্রনাথ , নজরুল , বিদ্যাসাগর মুছে দিতে....
চন্দ্রানী//
ক্ষীণায়ু এই জীবন আমার
ছিলো শুধুই আগলে রাখা
তোমার কোনো কাজেই লাগেনি তা
নীহার //
ঘর থেকে বেরিয়ে যে কৃষ্ণচূড়ার গাছ
তার নিচে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকি ।
বুকের উপর ঝরে পড়া পাপড়িগুলো হাতে তুলে গন্ধ নিই
কথাগুলো যেন আরো এক বিপ্লব এনে দেয় ।
রেল লাইনে শুয়ে থাকা একাদশ শহিদ
এই আমার দেশ আমার স্বাধীন ভারতবর্ষ !
কৃষ্ণচূড়া সাক্ষী থাকে তোমার লাল রক্তে
বুকের উপর হেঁটে যায় আমার মাতৃভাষা ।
চন্দ্রানী //
বর্ণমালায় অনেক লিখেছো কবিতা নির্ঘুম চোখে
একটা কৃষ্ণচূড়ার গাছ বুকে পুঁতে নিয়ো ,
কাল যখন লাল আগুন ঝরবে
প্রতিটা ভাষায় যেন আমার ই কথা লিখা থাকে ।
নীহার //
এখন তোমাকে নিয়েই এই শব্দের মায়াজাল বুনছি
অনেকদিন আমার মায়ের মুখ দেখিনি ,
অনেকদিন তোমার সাথে সন্ধ্যাতারায় চোখ রাখিনি
অনেকদিন শীতরাতে কুয়াশা মাখিনি বুকে ।
হয়তো আমাদের বৃষ্টিতে ভেজার অনেক গল্প ছিলো
সব গল্পের ভিতরেই কি জীবনের গল্প থাকে ....
না । যতটা জীবন পেয়েছি তার থেকে কিছু গল্প ধার নেওয়া
আসলে সময়ের কাঙালপনায় আমরা কখনো উদ্ভাস্তু হয়ে যাই ।
বান আসে উপকুলে , উপত্যকা বেয়ে তখন রক্তনদী আমার ভাষার জন্য
আমিতো তোমাদের কাছে মুষ্ঠিভিক্ষা চাইনি ,
চেয়েছি শুধু তোমাদের বোধে অহংকারে জেগে থাক আমার বর্ণমালা ।
নাড়ীতে আমার কমলার ঘ্রাণ ---
এই নির্জন রাতে আমাকে ঘুমোতে দেয়না বুলেটের আওয়াজ
তোমাকে নিয়েই আমার তাজা রক্তস্রোত আমার ঈশান বাংলা ।।
চন্দ্রানী//
ভেজা নক্ষত্রের শরীর ঘেঁষে যে সকাল হয়েছিল সেদিন
পলাশ বনে সেদিন বসন্ত নয় ...
ছিলো রক্ত দাগ ,
ফাগুনের আগুনে হুংকার,
ছিলো মাটির ঘ্রাণে আমার উপসী মায়ের মুখ ।
আমার অসহায় চোখ দেখেছিল বর্ণমালার মিছিল
রাজ পথে পথে ...
বরাক থেকে সুরমা
আর সুরমা বেয়ে গঙায় ।
নক্ষত্রেরা জেগেছিলো সারারাত
যেভাবে জেগে থাকে
জেগে রয় অনন্তকাল আমার ভাষার প্রশ্বাস ।
আরো একবার হিংস্র হতে পারি
আরো একবার নিয়ে আসতে পারি পলাশের আগুন
কৃষ্ণচূড়ার দাবদাহ ,
অথবা গলা ছিঁড়ে রক্ত নিতে
সকল শ্বাপদের ।
জন ফোয়ারায় স্নানের শেষে
বোতাম খুলে দিতে পারি ,
তবে জবান নয় ।
নীহার //
মুখের ভাষা কাড়ছে কারা
জন্ম অধিকার
মায়ের মানে হানছে আঘাত
বর্গি হানাদার
বাংলা আমার বাংলা তোমার
পথের পাঁচালী
মন সারিগান ভোরের আজান
সুখের দেওয়ালী
বাংলা আমার ঘুমপাড়ানি
চাঁদনী আলোর ধুম
এই ভাষাতে আকাশপরীর
গল্পে নামে ঘুম।
ঐ কারা ঐ সেলাই ফেলে
তোমার আমার ঠোঁটে
জবরদস্তি করতে জবাই
কষাই যত জোটে।
ভাষাকে দাও নির্বাসনে
স্পর্ধা এতই জোর?
বাংলা আমার নাওয়ের হাল
অধিকারের ভোর।
বরাক কাছাড় কোশিয়ারী
ইতিহাসের সাক্ষী
রক্ত নদীর কলঙ্কে কার
বোল লুকিয়ে রাখছি?
তপ্ত লোহার লাগাম পরাও
প্রতিবাদের কণ্ঠে
লজ্জা লজ্জা লজ্জা
তোমার শাসন নামের যন্ত্রে
প্রাণ দিয়েছে কমলা
তার বছর ষোলোর স্পর্ধা
বাংলা ভাষার কলজে বুকের
বাঁ দিক ঘেঁষা মজ্জা।
চন্দ্রানী //
ভাসান যেয়ো না
চালচিত্রে পুরাণ ও পুরোনো কথকতা
গঙ্গামাটি লীলাখেলা পুনর্জন্ম দেয় কি না দেয়
চূড়ো থেকে ব-দ্বীপ সব নিকোনো স্লেটের মতো
গরুর বাথান থেকে ঘাসের কবিতা
বিছিয়েছে বর্ণমালা যাকে ছাড়া
বর্ণান্ধ আমার ইতিকথা
একা ডিঙিটির ছায়ে বসে থাকি
আনমনে বুনে চলি অন্তরঙ্গ গাথা
পিছনে চাই না আর
সেখানে জমাট ঠোঁট
আজন্মের ফোটা বোল
তার গায়ে বুলেটের দাগ
বর্গি বর্গি ভয়, পেশাদার হানাদারি হাত
আততায়ী আক্রোশে কেড়ে নেয় জবাবি আখর
তার চেয়ে এই ভালো তুলে চলি একান্তের ফোঁড়
ফুটে ওঠে নাম- আমার রক্তে ঊনিশের ষোড়শী কমলা , হিতেশ , সুকোমল দিব্যেন্দু , জগন্ময় , ফুটে ওঠে সালাম, রফিক, বরকত...
মায়ের হাতের কিছু বাকি থেকে যাওয়া
মিঠে আদরের নকশীকাঁথা...
আমার রক্তে আমার ভাষা , এ নিয়েই আগুন খেলা ।
নীহার //
মে মাস এলে
অমলতাসের ফুলে হলুদাভ রঙ সরে মরচে পড়ে যায়,
পুরোনো সিঁড়ির ঘরে জ্বলে ওঠা উনিশটা পিদিমের
বুক জ্বলে পোড়া পোড়া বাসে,
পিদিমের বুক জ্বলা অলক্ষণ, দিদা বলেছিল।
দুঃস্বপ্নে দেখি, আর জন্মের অদেখা স্টেশনে
শোয়ানো রয়েছে সারি বাঁধা কচি মুখ
রক্তে ভেজা বিনুনীর ছোপ,
সাত ভাই চম্পার অশ্রু আল্পনা-
দোনলা বন্দুকের কষ বেয়ে জিঘাংসার স্রোত
আর রুদ্ধ কণ্ঠে ভাষার জেহাদ...
জ্যৈষ্ঠের ছন্নছাড়া বাতাসে
দুলে ওঠে কার যেন ভাটিয়ালি কান্নার স্বর-
জানলার ফটোফ্রেমে একফালি বিষণ্ণ শিলচর ভেসে আসে।
চন্দ্রানী // নীহার
যদিও আমাদের মা কে আমরা কখনো কথা বলতে শুনিনি
দেখেছি
যতবার পড়ে গেছি
ব্যথা পেয়েছি
মা এর চোখে তখন মেঘের ভাষা
রিমঝিম্, রিমঝিম্, রিমঝিম্---
যতবার স্কুলের মাঠে রেসে জিতে গেছি
মা কেমন রোদ্দুর হয়ে যেত
আলোয় ভেসে যেত স্কুলমাঠের প্রতিটি ঘাস, ঘাসফড়িং এর ডানা।
যদিও মাকে আমরা কোনো দিন কথা বলতে শুনিনি
কিন্তু, মনে পড়ে
মা কালো স্লেটে সাদা চক দিয়ে গোটা গোটা অক্ষরে হাত ধরে লিখিয়ে দিচ্ছেন , 'মা'।
জ্যোৎস্নায় ভেসে যাচ্ছি ----
সেদিন আমরা প্রথম জেনেছিলাম
আমাদের মাতৃভাষা, বাংলা
যার অন্য নাম মেঘ, রোদ্দুর অথবা জ্যোৎস্না ।
যার আরেক নাম কমলা ....
আমাদের ভাষা মা ।
সমাপ্ত ।
***************************
ভাষা তর্পন
চম্পা ভট্টাচার্য্য
'৫২র রমনায় সদ্য ফোঁটা পদ্ম দল
তাজা বুলেট বুকে লুটিয়ে পড়ে কৃষ্ণচূড়া তলে
ছলকে ওঠা রক্তে ঢেকে যায় আকাশ
রৌদ্রদগ্ধ মধ্যাহ্নে নেমে আসে সায়াহ্নের অন্ধকার
মুষ্টিবদ্ধ হাত রক্তস্নাত মাটি আঁকড়ে
শেষ নিঃশ্বাসে বেঁধে রাখতে চায়
জীবনের প্রথম উচ্চারণ 'মা' কে
বুকের ভাষাকে,মায়ের রক্তাক্ত আঁচলে।
৬১র ঊনিশ মে, বুলেট ছোঁয়ায় আগুন জ্বলে
এগারো প্রাণের ধিকি ধিকি তুষে
মুখের জবান কেড়ে নেবার প্রতিবাদে
কিশোরী কমলার কৈশোর হল ছিন্নভিন্ন
রক্তে ভাসলো শিলচর শহর
মায়ের অশ্রু রক্তে মিশে জোয়ার এল
বিদ্রোহী বরাক নদীতে।
ঠিক যেমন সদ্যোজাত সন্তান
সারা শরীর মায়ের রক্ত লেপে
মুষ্টিবদ্ধ হাত দুটো আকাশে তুলে
চিৎকার করে ওঠে ও মা আ আ
সামিল হয় অস্তিত্ব রক্ষায়, বেঁচে থাকার লড়াইয়ে।
সময়ের উপর দিয়ে বয়ে গেছে বহু ঢেউ
পড়েছে পলি স্মৃতির মিনারে -
শহীদ বেদিতে ফুলে,মালায় বাঙালি সেজে
আবেগ মথিত কন্ঠে তর্পণ গান গাই
" বাংলা আমার দৃপ্ত স্লোগান,ক্ষিপ্ত তীর ধনুক "
জানিয়ে দেই একুশে ফেব্রুয়ারি, উনিশে মে
তোমায় আমরা ভুলিনি, ভুলবো না।
ধুসর গোধূলির ওপারে চোখের জলে ভাসে
আমার সালাম রফিক বরকত জব্বার আর
দশটি ভাইয়ের একটি কমলা বোন।
******
No comments:
Post a Comment