Editor. Nihar Ranjan Das
Siliguri. Darjeeling. India
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
সঙ্কল্প
চৌকোনা চৌকোনা ঘর,
ঘরের মধ্যে ঘর, পাশাপাশি ,কোনাকুনি
আমার পৃথিবী!
খোলা বাতায়ন, বাতাসের আগমন
রোদ চুপিসারে ঢোকে
বৃষ্টির ফোঁটার বিরক্তি শুনি,
ঘরের ভিতরে চেয়ার, টেবিল
ফ্রিজ, মিক্সি, কৌটো, খাবার
খাট, চৌকি, আমরা, যে যার মতো,
যেগুলো যেখানে আছে, জায়গাও বদলায় ,
সামনে বোসদার ঘরে জিনিসপত্র প্রায় একই
কিন্তু আলাদা জায়গায়, ওদের পৃথিবী!
সবার নিজেদের ঘরে
আছে ফুলদানি, শোকেস ভরে কত কিছুই
দেয়ালের রংটাও নিজের পছন্দের,
এত বড় পৃথিবীর খবর, টিভির পর্দায় ভার্চুয়াল
খবরের কাগজের নির্জীব পাতায়
যার যেমন পছন্দ বেছে নেয়
জীবন্ত ছবিগুলো, কখনো চমকে দেয়
নিজেদের পৃথিবীর চার দেয়ালে, শুনি, দেখি;
পৃথিবীর বৈচিত্র্য ঘেরা গাছ, নদী, পাহাড়ে নয়
জীবজন্তু, মানুষের মাঝে শুধু নয়
বৈচিত্র্য আমাদের প্রত্যেকটি মনে
প্রত্যেকের ধ্যান ধারণায়
প্রত্যেকের চলাফেরায়
প্রত্যেকের স্বভাবে, চরিত্রে, ব্যবহারে
এটাই সত্য, অস্বীকার করলেও!
যে যার নিজস্বতা খুঁজে পায় এরই মাঝে,
কোন জটিলতায় এই পথ যেন ভঙ্গুর না হয়
নিজেদের সঙ্কীর্ণ মনটাকে বুঝিয়ে
ফুলের মতো প্রস্ফুটিত করাই হোক, সঙ্কল্প আমাদের!
পৃথিবী ঘুরে চলুক নিজের ছন্দে।
-----
মহামারী
বৃষ্টি নামলেই
শহরটা গাঁয়ের মত হয়ে যায়
ক্ষেত্রফল জুড়ে মিশে যায় জল আর প্রেম
অসময়ে কিছু প্রেমিক-প্রেমিকা
সস্তা মদ খেয়ে ঢলঢলে রাস্তা ধরে
শীতঘুমে চলে গেছে
সেইসব বেসামাল রাস্তার ধুলো-বালি
ঘোলা জলে মিশে
এ-গলি সে-গলি ঘুরে
জং-ধরা দরজার কাছে
হাঁটু ডোবা জলে
কলেরার মতো ফিরে ফিরে আসে ।
- -----
উপহার
এ মনের ভিতরে,
আরও একটি মন, বাঁচিয়ে রেখেছি,
সময় ফুরিয়ে গেলেও,
বেঁধেছি তারে সযত্নে।
শ্রাবণ আসে যায়,
দেখি যে মেঘের গায়ে, রংয়ের বদল,
কথা এখনও বাকি,
জমিয়ে রেখেছি সময়।
সুদূর আকাশ পানে,
চেয়ে দেখি, নিয়মিত উপহার সম,
ঊষা ও গোধূলি,
চোখ বুজে সুখ অনুভব।
পারলে একবার এসো,
মনের প্রান্তর, সাজানো ছায়া তলে,
তোমায় দেবার আছে,
আমার একটা নদী।
-----
বৃষ্টি
বৃষ্টি মানেই,
নেই রোদ্দুর,
রোদে ভরা আকাশ!
বৃষ্টি হলেই,
টাপুর টুপুর,
এলো,মেলো বাতাস!
বৃষ্টি মানেই,
বাইরে গেলে,
মাথায় ছাতা নেওয়া,
বৃষ্টি মানেই,
ভেজা মাটির,
গন্ধে পাগল হওয়া!
বৃষ্টি হলে,
ধীরে ধীরে,
জলেতে পা দেওয়া,
বৃষ্টি মানে,
বর্ষার গান,
গুনগুনিয়ে গাওয়া!
ঝড়ের সাথে বৃষ্টি হলে
উথাল, পাথাল হাওয়া,
ভালো লাগে,
তবুও যেন,
বৃষ্টির সুখ পাওয়া!!!
-------
কিছু থাকে বাকি
আজও দু'একটা সুখ তাকিয়ে থাকে
আমার বিবর্ণ মুখের দিকে।
আমিও কাছে টেনে নিই তাদের
সব চাওয়া পাওয়ার হিসেবগুলোকে পেছনে ফেলে
আজও ভালবাসি এই সুন্দর পৃথিবীটাকে।
মুক্তির আকাশ আমায় শিখিয়েছে
জীবন ক্ষুদ্র, ভালবাসা মহৎ।
জানলার ঝুলে কিছুটা ঝাপসা আমার আকাশ
চিলেকোঠার সলতেটা তাই আগলে রাখি পরম যত্নে।
দু'চোখে চিকচিক করে প্রাচীন রোদ
অজান্তেই হাত চলে যায় অভিমানের ভিজে পাঁচিলে।
বুঝতে পারি ভালবাসা আজ ভাল নেই
হাজারো অসুখ ডানা বেঁধেছে তার শরীরে।
অথচ আমরা চাইলেই পারতাম-
পরস্পরের মনের একটু কাছে চলে যেতে
চোখের গন্ধে করতে চোখ প্রদক্ষিণ।
কিন্তু পারিনি..…
আলোর মূল্য অন্ধকার না হলে যে বোঝা যায় না।
কে বলেছিল আজ আর মনে নেই-
"নিজেকে ঠিক ততটাই ভালবাসো
যতটা ভালবাসলে এক বিরাট শূণ্যতা পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে পূর্ণতায়।"
ভাবতে ভাবতে হাঁটতে থাকি দিকশূণ্যপুরের দিকে
আনমনে প্রচ্ছদ আঁকি সরে যাওয়া গল্পগুলোর গায়ে।
কিছু শব্দেরা ফুরিয়ে যেতে যেতে গুনগুন করে ওঠে রবিঠাকুরের সেই প্রিয় গান-
"তোমায় কেন দিইনি আমার সকল শূণ্য করে"....
------
গাঁয়ের রথের মেলা
শহর ছাড়িয়ে একচল্লিশ কিমি দূরে,
বসেছে একটা ছোট্ট রথের মেলা |
পায়ে হেঁটে আসতে হবে এখানে,
যায় না পাওয়া ভ্যান রিক্সার গাড়ি|
ছোট্ট গাঁয়ের রথের মেলা দেখলে চলে এসো,
পাবেনা এখানে দূষণে ভরা মাঠ,
যেদিকে তাকাবে পাবে সবুজের ছড়াছড়ি,
ফসলে ফসলে ভরে আছে সবুজ মাঠ খানি |
ঘরে ঘরে পাবে অভাবি দুঃখী ছেলেকে,
তবু এদের মুখে হাসি মাখানো আয়না|
চারপাশে ভরে আছে রথের মেলার আবেশে,
তারি মাঝে সাজে লটকা জিলিপি
পাঁপড় ভাজার পসরা |
দু -চারটে ঘন্টা থাকলেই টের পাবে,
গ্রাম্য মানুষের রথের মেলার প্রাণের স্পর্শ |
একটু হলেও ভক্তরা সবাই....
হরি হরি বলে রথের দড়িতে দেবেন টান |
এখানে আছে জগন্নাথ বলরাম ও শুভদ্রা,
ভক্তরা সবাই ছেটান চিনি কলা ও বাতাসা,
গাঁয়ের মানুষ প্রসাদ রূপে নেয় ভক্তের মাঝে এসে,
ঘরে ঘরে মহা আনন্দে নতুন প্রাণের স্পর্শে|
--------
আহ্বান
গহীন অন্ধকারের ঠিক একহাত আগে
স্তম্ভিত আমি
পেছানো অসম্ভব , এগোলে খোলা কফিন
দূর আকাশের মিটিমিটি তারাদের আড্ডায় সামিল হবার আহ্বান
হৈ হুল্লোড় নেই নিবিড় শান্তি ও নেই , শুধু জলন্ত হাহাকার
এমনি করেই একাকীত্বের পথ ধরে ,
একদিন পৌঁছে যাবো জীবনের শেষ স্টেশনটায়
তুমুল বৃষ্টি হবে
প্লাটফর্মের শেষ ডিজিটাল ঘড়িটাতে ঝাপসা দেখাবে সময়
ক্লান্তির আবেশে বুজে আসা চোখে
ছড়িয়ে থাকবে স্নিগ্ধ নীরবতা ।
-------
ফুরিয়ে যাওয়ার আগে
চঞ্চলতা, বাকপটুতা, আচরণে সূক্ষ্মতা,
প্রজাপতির ন্যায় ছটফট করা, চোখে চোখে
শাসন করা, এক আকাশ হাসি মুখে
বিলাপের পর বিলাপ, পাশাপাশি হেঁটে যাওয়া।
দীর্ঘশ্বাস, নদী দিয়ে বয়ে যায় স্মৃতি।
দূর হতে দেখছি, তোমাকে আগুনে পুড়তে
পুড়তে সমুদ্রে হারিয়ে যাওয়া ভেঙে যাওয়া
খানখান হওয়া নাবিকের মতোন।
সবটা ফুরিয়ে যাওয়ার আগে
শান্ত হয়ে নদীর জলে পা ডুবিয়ে
বুকের পাথর ভাসিয়ে দিও, মেঘ বালিকার মতোন।
তারপর আকাশের দিকে চেয়ে স্থির দৃষ্টিতে বলো
: ফিরতে চাই আমি, আমার মেয়েবেলার যাপনে।
-----
আর্শিতে
কাঁচ ফাটা আর্শিতে আমার অস্পষ্ট অবয়ব। যে শিকর হতে আমার উদ্ভব
দিক, দিগন্তে প্রসারিত রক্তের বাঁধনে নিমজ্জিত।
শৈল শিখর নত হয়ে আসে তাপ বিকিরণে।
কঙ্কালসার শরীর নিয়ে দৃঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে আগামীর প্রত্যাশায়।
মেঘের আদ্রতা ছুটে আসে
বারি বাষ্প নিয়ে।
হারিয়ে যাওয়া কৈশোর কে খোঁজার চেষ্টা করি,
পায়ের তলার মাটি আলগা হতে হতে ঝুরঝুরে চোরাবালি হয়ে যাচ্ছে।
বাসস্থান ভাগ হলো, ইচ্ছে গুলো হারিয়ে গেলো রক্তের হলো না ভাগ।
আজ জীবনের শেষ ভাগে এসে
পশ্চিমের ডুবে যাওয়া আলোতে
ভাঙ্গা আরশিতে দেখতে পাই
সহস্র রেখায় স্পষ্ট আমার ও স্বজনদের নির্লিপ্ত অবয়ব ।
-----
End of 8th page
No comments:
Post a Comment